আমার গল্প গ্রন্থ 'কয়েক টুকরো ঈশান' নিয়ে আলোচনা করছেন সাহিত্যিক বিদ্যুৎ চক্রবর্তী , শিলচর থেকে প্রকাশিত 'গতি দৈনিক' কাগজে । পড়ুন ওপরে ।
*********************************************************
‘সহজ বিভঙ্গে যিনি দেবদারু’ হতে চান ‘স্বর্গের সিঁড়ির পিচ্ছিল অবস্থানের জন্য’, তিনিই কবি! ‘জীবনে আত্মপ্রসাদ’ লাভ করে যিনি উপলব্ধি করেন ‘এ জীবন মধুর বিষাদ’ তিনিই কবি! কাঙ্খিত ভুলকে অনায়াসে যিনি ছেড়ে যেতে তৈরি থাকেন তিনিই কবি, -কবি দেবলীনা সেনগুপ্ত! ‘চন্দ্রাহত’ ও ‘আলোকবর্ণা’ কাব্যগ্রন্থের পর দেবলীনার কলম সৃষ্টি করে আরেক চিরন্তন সোহাগ – ‘প্রেম তুমি’! চল্লিশটি কবিতা নিয়ে দুই মলাটে জন্ম নিল দেবলীনার অফুরণ হৃদয়োত্সারিত আখ্যানরাজি। নিভৃত শব্দের অলিতেগলিতে খুব নিঃশব্দে তিনি ফুটিয়ে তোলেন এক ‘মগ্নচেতন’কে। সেখানে প্রকৃতির এক চিরপরিচিত নিভৃত জগতের মরমী রূপটি কলমের ডগায় এসে ধরা দিয়েছে। প্রতিটি কবিতা দেবলীনার অপরূপ নির্মাণশৈলীর নিদর্শন নিয়ে সুবাতাসে ভরে দিচ্ছে পাঠক হৃদয়! এমনই সৃষ্টিশৈলী নিয়ে কবি বিচরণ করলেন প্রকৃতি থেকে প্রেমে, অপ্রেমে আবেগে! গ্রন্থে আলাদা সুর নিয়ে বাস্তুহারার আখ্যানও উঠে এলো ‘লিগ্যাসী’, ‘দেশ’ ইত্যাদি শিরোনামের কবিতায়। আগরতলার নীহারিকা প্রকাশনীর সুন্দর বাঁধাই, ছাপা, সযত্ন নির্মাণ ও মুদ্রণপ্রমাদ প্রায় না থাকায় গ্রন্থটি সর্বাঙ্গসুন্দর ও সংগ্রহযোগ্য হয়ে উঠেছে। অনিমেষ মাহাতো তাঁর প্রচ্ছদ নির্মাণে নীল রঙের যথেচ্ছ ব্যবহার করে একে দুর্বোধ্য ও রহস্যময় করে তোলা ছাড়া দেবলীনার এই তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ যে পাঠককুলকে প্রেম সঞ্চারে প্লাবিত করবে এতে কোন সন্দেহ নেই। দেবলীনা আপনি লিখুন, আরও!
শীতের রাতগুলি আসার কয়েকদিন আগে এক বন্ধুর সাথে রাতে হেঁটে ফিরছিলাম খগেশ্বর রোড দিয়ে। নিতান্ত ঘরোয়া সাজে অধ্যাপক সুশান্ত কর তাঁর আবাসনের নিচে এসে নিজের গাড়ি থেকে কিছু কাগজপত্র নিয়ে যাচ্ছিলেন। আমি নয়, তিনিই আমাকে হঠাৎ আধো অন্ধকারে আবিষ্কার করলেন আর একপ্রকার টেনে নিয়ে গেলেন ওর ভদ্রাসনে। তিনি ঐখানে না থাকলে আমি যে আবারও তার বাড়িতে যাওয়া এড়িয়ে যেতাম তা যেমন তিনি জানতেন, আমিও! সেই লজ্জা লুকোবার চেষ্টায় কান পর্যন্ত হাসি তুলে তাঁর বাড়িতে ঢুকে দেয়াল ঘড়িতে দেখি রাত দশটা। এমন রাতে ‘তিমিরতীর্থ’ হাতে তুলে দেবার মতো উপযুক্ত বই বটে। চিন্তাবিদ ও কথাশিল্পী হোমেন বরগোহাঞির এই উপন্যাস অনুবাদ করেছেন সুশান্ত কর। অসমীয়া সাহিত্যের মনিমুক্তা থেকে বাঙালি পাঠক যাতে ব্রাত্য থেকে না যান সেই কথা মাথায় রেখে সুশান্ত ইতিমধ্যে আমাদের কিছু জরুরী অনুবাদ উপহার দিয়েছেন । অসমের সচেতন বাঙালি পাঠক মাত্রেই তা জানেন। অরূপা পটঙ্গীয়া কলিতার ‘ফেলানি’র মতো দীর্ঘ উপন্যাস অনুবাদ করে সুশান্ত আমাদের এক বেদনার্ত দলিলের সঙ্গে পরিচয় করিয়েছিলেন । গুয়াহাটির বিকি পাবলিশার্স বইটি ছেপেছিল।
বর্তমানের যে বইটি সুশান্ত আমাকে দিলেন সেটি অসমের সকল সংগ্রামী, বিপ্লবী বা আপোষহীন যত ব্যক্তিত্ব আছেন তাঁদের পড়া উচিত। এই আলোচনা যদিও হোমেন বরগোহাঞির সাহিত্যের নয়, কিন্তু সেসবের সবগুলি কালজয়ী না হলেও জনসাধারণের মানসিক ও বৌদ্ধিক উন্নতির জন্য অপরিহার্য। আমি বলছিলাম অনুবাদকর্মের কথা। মূল গল্পটিকে অনুবাদ করার সময় সুশান্ত স্যার এক অদ্ভুত মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। উপন্যাসে গল্পের খাতিরে মার্ক্সতত্বের বিশ্লেষণ এসেছে। এসেছে কাছাকাছি সম্পর্কগুলির মধ্যে টানাপোড়েন, রাজনৈতিক অস্থিরতার ইঙ্গিত, ইত্যাদির সঙ্গে ক্রমাগত মানসিক যুদ্ধ করতে থাকা কিছু মানুষের ঘাত প্রতিঘাতের কথা। নতুন বা অল্পবয়স্ক পাঠক যাতে বিভ্রান্ত না হন সেসব দিক নিয়ে ভেবেই সুশান্ত সহজ এবং উপযুক্ত বাংলা শব্দচয়ন করে গল্পটিকে বুনে গেছেন, সমূহ নতুন পাঠকদের জন্য প্রাঞ্জল ও বোধগম্য করে। এখানেই এই বইটির অনুবাদ নজর কেড়ে নেয়। এবং অবসম্ভাবীইভাবেই অনুবাদ হয়ে উঠে অনুসৃষ্টি ।যারা ‘তিমির তীর্থ’ পড়েননি তারা এটি পড়ুন এবং দেখুন ১৯৭৫ সালে প্রথম প্রকাশিত এই উপন্যাসের উপজীব্য কেমন আজও প্রাসঙ্গিক। ছোট এই বইটির প্রচ্ছদ কল্পনা আমাদের সুহৃদ রেখাচিত্রশিল্পী ত্রিদিব দত্তর। তিনি গল্পের প্রতি সুবিচার করে এই প্রচ্ছদ নির্মাণ করেছেন, যদিও পাঠকহিসেবে কভারে লাল রঙের উল্লেখ সামান্য থাকলে ভাল হতে বলে আমাদের মনে হয়েছে।
তিনসুকিয়া কলেজ এই গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে। বাংলা লেখালেখির প্রকাশক বা ব্যবসা অসমে দুর্লভ এ কথা সর্বজনবিদিত। সেই সময় দুটি বাংলা বই (‘অথবা’ শিরোনামে হেমাঙ্গ কুমার দত্তর অসমীয়া কবিতার বাংলা অনুবাদকর্ম যা করেছেন আবার ঐ অধ্যাপক সুশান্ত কর) ছেপে কলেজ কর্তৃপক্ষ নিজেদের দায়িত্বশীলতার অসাধারণ উপমা তুলে ধরেছেন। সাম্প্রদায়িক সদ্ভাবনা, বিভিন্ন ভাষা-সংস্কৃতির সহবস্থানের ক্ষেত্রে এটি এক উজ্জল দৃষ্টান্ত হয়ে রইল। দি আসাম কম্পিউটারস মুদ্রণ ও বাঁধাই করেছে সুদৃশ্য ও প্রায় নির্ভুল।
অনুবাদকের সাথে যোগাযোগ ছাড়া বইটি পড়ার আর কোনো উপায় আমার জানা নেই।
যেহেতু সেদিন রাত দশটা বেজে গিয়েছিল তাই অফার করার পরেও চা আর বৌদির হাতের বিখ্যাত ডিমের অমলেট আমাকে প্রত্যাখ্যান করে উঠতে হয়েছিল এবং সেসব কিছুর ক্ষতিপূরণ ‘তিমির তীর্থ’র নিবিড় পাঠ আমাকে পুষিয়েছে!
ফুটে উঠবার কথা
কতই বা বয়েস হবে, এই সপ্তদশ ছেড়ে
অষ্টাদশী হতে চলেছে ও! এবং দুনিয়ার বহু অল্প বয়েসী প্রতিভাদের মতই আবার ও প্রমান করলো যে শিল্পীর
চেতনার উত্তরণ ঘটার কোনো বায়োলজিক্যাল সীমানা হয় না, হয় না বয়েস, পারিপার্শিকতা ও
সমাজের বিশেষ ভূমিকা । উল্লেখিত
সূচকগুলী শুধু মাত্র দশ বারো শতাংশ প্রভাব ফেলে সাধারণ এক ব্যক্তির ওপর, যা কিনা
তাঁকে সাধারণ ব্যক্তি থেকে সচেতন শিল্পীতে উন্নীত হতে একটুও বাধা দেয় না।
৮ মার্চ, ২০২০
আন্তর্জাতিক নারী দিবসে 'বর্ণালি
শিশু কল্যাণ সংস্থা, তিনসুকিয়া'র আমন্ত্রণে
গিয়ে সংস্থার ৩৮ তম প্রতিষ্ঠা দিনে পৌষালি গাইল 'চিৎকার কর মেয়ে' , এই সুবিখ্যাত গানটি ! তো আমিও বলছিলাম পৌষালি করের কথা । উজান অসমের একেবারে
প্রান্তীয় শহর তিনসুকিয়াতে বিগত কয়েক বছর ধরে সাহিত্য শিল্প সঙ্গীত এসব চর্চার একটি
নিয়মিত বহমানতা এসেছে , যদিও একে স্রোত বা উচ্ছাস বলা চলে না সে অর্থে ! এর কারণ
অবশ্যই বহুমুখী । বাণিজ্য
প্রধান সমাজ, প্রকৃত অর্থে অল্প-সংখ্যক সচেতন ব্যক্তি, রাজনৈতিক উদাসীনতা, নিজস্ব ভাষাশিক্ষার
দুর্বল পরিকাঠামো, সাম্প্রদায়িক সমস্যা ইত্যাদি এই শহরকে মাখামাখি ভাবে জড়িয়ে
রেখেছে । তো
এই অবস্থায় গান বাজনা তো হয়, কবিতা লেখাও যায়, নাটক মঞ্চস্থ হয় , আবৃত্তি আউড়ানোও
চলে ; যতক্ষন না সেই গান মানুষের অন্তরমহলে সুঁচের মতো আঘাত হানে, যতক্ষন না সেই
কবিতা পড়ে অনেকের ভ্রূ কুঁচকে আসে দেশদ্রোহিতার সন্দেহে, যতক্ষণ সেই নাটক সমাজ
ব্যবস্থার নগ্ন রূপকে মঞ্চে আছড়ে ফেলে অনেকের বিরাগভাজন না হয়, যতক্ষণ না সেই
আবৃত্তি কানের অলিগলিতে গলিত সীসার মতো ঢেলে দিতে থাকে সত্য ও সংগ্রামের শাস্বত
বাণী ! পৌষালি কর শহর তিনসুকিয়ায় এক ব্যতিক্রমী শিল্পীর মতো মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে !
ওর গানে, আবৃত্তিতে , আঁকায় ছড়িয়ে রয়েছে সেই বহুমুখী শিল্প প্রতিভা যা মানুষকে
ভাবায়, নতুনকে আলিঙ্গন করে নেবার শিক্ষা দেয় ! যুগ পাল্টাচ্ছে দ্রুত । সেই সঙ্গে
পাল্টে যাচ্ছে সাহিত্য সংস্কৃতি সঙ্গীত এসবের আঙ্গিক । এসেছে নতুন
পরীক্ষা নিরীক্ষা ! এবং সমস্যাটা ঠিক এখানেই ! পুরাতন অনেকেই একে সাদরে, সদরে নিতে
পারেননি বা পারছেন না ! ফলে দুখঃজনকভাবে তারা ছিটকে যাচ্ছেন আধুনিক পরিমণ্ডল থেকে।
একটা উদাহরন দি । গায়কের
কাজ কি? গান গেয়ে পয়সা উপার্জন করা , না সেই সঙ্গে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা রেখে
জনসচেতনতা বাড়ানোতে সঙ্গীতকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা ? এই দুটো দিক একসঙ্গে
থাকলেই তাঁকে প্রকৃত শিল্পী বলা চলে।
সেজন্যই জোন বেজ, বব ডিলান, হ্যারি বেলাফন্ট, ভূপেন হাজরিকা, কবীর সুমনরা
আন্তর্জাতিক স্তরে শিল্পীর সম্মান ও স্বীকৃতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পেয়েছেন অসংখ্য জনতার
মরমী হৃদয় আসনটি , যেখানে তাঁদের অবস্থান চিরকালীন হয়ে থাকবে ।
ঠিক তেমনি বহু আবৃত্তিকার ঠান্ডা
নরম প্রেম পিরিতির ও প্রকৃতি বর্ণনার কুসুম কোমল পথে গলার সুধা ঢেলে পুরো ক্যারিয়ার
যাপন করেছেন, শোনাননি সবহারাদের, দুর্গতদের ও শোষিতদের আর্তি তার আবৃত্তিতে ! তো
এরাও শিল্পী , তবে ইতর ভাষায় আলুভাতে মার্কা !
খুব ছোটবেলা থেকে আমি পৌষালির
গড়ে উঠা দেখেছি ! আর সকলের মতো ২৫শে বৈশাখে রবীন্দ্র কবিতা আবৃত্তি ও গানের প্রতিযোগীদের
মতই শুরু হয়েছিল ওর পথ চলা ! কিন্তু আপন ছন্দে সুরে সেই পথের মোড় ফিরে গেছে এক
নিজস্ব শৈলীতে ! শহর তিনসুকিয়াতে বাংলা ফোক, ভাটিয়ালি, লোকসঙ্গীত, বাউলএর ধারার যে
অসংখ্য শাখা প্রশাখা আছে , আছে গায়েন ভঙ্গি, এসব কিন্তু পৌষালি এই সবুজ বয়েসেই দেখাতে
শুরু করেছে ! সেই সঙ্গে অসংখ্য স্বর প্রক্ষেপণ বিধি, বিভিন্ন ধারার লোকগান , বাংলাদেশ , ত্রিপুরা ও উত্তর
পুবের বাংলা গানের যে সরস ও সমৃদ্ধ ধারাটি রয়েছে, যাকে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে এতদাঞ্চলের
লোকেরা কলকাতাকেন্দ্রিকতার মায়াপাশে ভুলে রয়েছিলেন নিতান্তই অজ্ঞতার পরবশে, সেসব
পৌষালির গানের সুরে প্রায়ই উঠে আসছে অধুনা সময়ে ! হ্যা, শহরের অনেকের সঙ্গে
কথাবার্তা বলে দায়িত্ব নিয়েই বললাম এ কথা ! যেসব বিষয় ও শিল্পীকে পৌষালি নির্বাচন
করছে ওর গানের পরিবেশনায় তাঁদের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন শহরবাসী , এই প্রথম ! হ্যা ,
ঠিক শুনলেন , এই প্রথম ! কই আগে তো তিনসুকিয়ার মঞ্চে অনুসূয়া অনাদিলের গান গাইতেন
না সাধারন শিল্পীরা, গাইতেন না হেমাঙ্গ বিশ্বাসকে, কবি আলফাজকে কি কেউ পৌষালির আগে
এই শহরে আবৃত্তি করেছে ?
এই তো বিগত দীপাবলীর সন্ধ্যায়
হিজুগুরিতে পৌষালি গাইল 'কী
ঘর বানাইমু আমি' এই
হাছনের গান ! সে জানে আর আমি জানি'
এই লালনের গানটিও ! আয়োজক ছিল প্রগতি গোষ্ঠী !
পৌষালির কন্ঠে গতবছর শুনেছিলাম সুনীল মাহাতোর কথাতে কুড়মালি ঝুমুর 'পিন্দারে
পলাশের বন'এর
মতো চা বাগানের অনিন্দ্য সঙ্গীতটি ! গুয়াহাটি পান্দু রেস্ট ক্যাম্পর অনুষ্ঠানে
যেমন জনপ্রিয় ভূপেনদার ‘কহুয়া বন’ গাইল ঠিক সেইসঙ্গে ২১ জুন , ২০১৮
বিশ্বসঙ্গীত দিবসকে কেন্দ্র করে শিলচরের বাংলা গানের দল 'দলছুট' উদযাপন করা নিজেদের
দশ বছর পূর্তি উৎসবে শিলচর 'রাজীব
ভবনে' 'প্রজন্মের
একক' অনুষ্ঠানে
পৌষালি গাইলো ”আমি সুন্দর হবো”, ফারজানা ওয়াহিদ সায়ানের মাটির সাথে দোস্তি”, ফারজানা
সায়ানের “সে কি আমার কবার কথা”র সঙ্গে লালনগীতি “মধু হই হই বিষ” ইত্যাদি ! প্রচলিত চাটগাইয়া গান রাধারমণ দত্তর “ভ্রমর কইও গিয়া”, অমর পালের “কালারে কইরো গো
মানা” এর সঙ্গে কিছু রবীন্দ্রনাথগানও ।
21শে ফেব্রূয়ারি, আন্তর্জাতিক
মাতৃভাষা দিবসে পৌষালিকে আবৃত্তি করতে শুনি অসম ও উত্তর পূর্বের বাংলা ও বাঙালির
সবহারানোদের কথা তুলে ধরা কবি শিলচরের শক্তিপদ ব্রহ্মচারীর বিখ্যাত কবিতা 'উদ্বাস্তুর
ডায়েরি', অথবা
ডিব্রূগড়ের কবি উর্ধেন্দু দাসের কবিতা ।
তিনসুকিয়াতে এসবগান বেশির ভাগ শিল্পীরা
গান না, আবৃত্তিকারেরা করেন না । সুতরাং
বোম্বাইয়া আমের মতো হিন্দি গান ছাড়া যে আমাদের শেকড়ের বাংলা গান আছে , আছে বিশ্বজনীন
শ্রেনিহীন শোষিতদের কান্না, বাস্তুহারার মাটির প্রেমের গান, এসবের সঙ্গে এই ছোট শহরের
শ্রোতা পরিচিত হচ্ছিলেন না, থেকে যাচ্ছিলেন ব্রাত্য । এই কাঁচা বয়েসে পৌষালি সেই দায়িত্বটুকু পালন করে প্রকৃত
শিল্পী সচেতনতার পরিচয় দিচ্ছে । প্রসঙ্গত
উল্লেখ করি ইংরেজি মাধ্যমেই কিন্তু পড়াশুনা পৌষালির । সুতরাং যেমন
বলেছিলাম শুরুতে, প্রতিবন্ধকতা থাকতে পারে কিন্তু তা প্রকৃত শিল্পীর গতিকে প্রতিহত
করে না ।
যারা পৌষালিকে চেনেন না , শোনেন
নি তাঁদের জন্য আন্তর্জালে সক্রিয় মেয়েটির সূত্র নিচে দিয়ে ওর ইউটুব, ব্লগ
ইত্যাদিতে যাবার পথ বাতলে রাখলাম। ঘুরে
আসুন, ভালো লাগবে !
সকল শহরবাসীর পক্ষ থেকে এই
নাগরিক শিল্পীর নিজের, ওর অভিভাবকের, শিক্ষকদের শুভ কামনা জানাই । এগিয়ে
চলো মেয়ে !
youtube.com/c/MusicalDiariesPoushali
poushalikar.blogspot.com
******************************************************************************
কুশলী চিরশ্রীর - শব্দ জগত
বহুদিন আত্মগোপন করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হঠাত নিজেকে
প্রকাশিত করলো একাধারে বিজ্ঞান বিস্ময় ও সৃষ্টিকে সংকিত করে দেবার মতো মোক্ষম জাতক
মান্হাটান প্রকল্পের আনবিক বালক. সৃষ্টিকে সংকিত করে তোলার উপমাটি বাদ দিয়ে একে
নন্দিত করবে বললেই এই ঘটনার সাথে নির্দ্বিধায় জুড়ে দিতে পারি আয়তনে ক্ষুদ্র অথচ সাহিত্য লক্ষীর একটি মনোরম ধানের
শীষ “জলবিকেলে মেঘের ছায়া”! এই ছোট্ট কবিতার বইটি লিখেছেন ত্রিপুরার চিরশ্রী দেবনাথ.
চিরশ্রী নবীনা, এখনো চল্লিশ পেরোননি, কিন্তু কাব্যগ্রন্থ হিসেবে প্রথম বইটি পড়ে ও
দেখে মনে হয় এই সাধনায় তিনি নিরবধি মগ্ন. অবস্য বইটির ভূমিকায় প্রকাশক নকুল রায়
জানিয়েছেন যে চিরশ্রী ইতিপূর্বেই গল্পকার ও কবি হিসেবে ত্রিপুরায় একাধিকবার পুরস্কৃত
হয়েছেন.
কবির সঙ্গে আমার পরিচয় মুখবইয়ের পাতায়! তাঁকে পড়ার পরেই
আমার দৃঢ প্রত্যয় হয়েছিল বাংলা সাহিত্যে চিরশ্রী একটি শক্তিশালী সংযোজন. ফেব্রুয়ারী
২০১৬তে ওর প্রথম বই, একই বছরের শেষের দিকে, দ্বিতীয় বই “ঋতুক্ষরণের রোদচশমায়” এবং ডিসেম্বর
২০১৭য় তৃতীয় বই “প্রেমে সন্ত্রাসে” প্রকাশিত হয়! গত জুলাই মাসে কবি ওর তিনটি
বই আমাকে সুদুর ত্রিপুরা থেকে ডাক যোগে পাঠালেন ! তাঁকে অসংখ্য ধন্যবাদ, তাছাড়া
ক্ষমাপ্রার্থী, ক্রমাগত বই পাঠাবার জন্য বিরক্ত করার এবং দেরীতে এই পাঠ প্রতিক্রিয়া
জানানোর জন্য. আলস্য ছাড়াও লেখা পড়ে প্রারম্ভিক ঘোর কাটাবার জন্যও কিছু সময় তো
অবস্যই প্রয়োজন !
প্রতিটি গ্রন্থেই চিরশ্রীর প্রতিভা ও বাচন ভঙ্গি আমাদের ঘিরে
থাকা বিষয় সমুহকে নতুন আঙ্গিকে পরিবেশিত করেছে. কিন্তু মূল কথা সেটা নয়, চিরশ্রীর
কবিতা ক্রমশ তিনটি বইতে শাণিত হতে হতে নির্ভুল ছেদ করে সমাজের মর্মমূলে, একে
নাড়িয়ে দিয়ে যায়. তিনি সুধু তাঁর লেখা দিয়ে সমাজকে নিন্দা বা সমালোচনার বাঁধনে
কষেন না, সেই সঙ্গে সমস্যা মুক্তির একটি সাবলীল পথও দেখান, আর এখানেই সম্ভবত
সাহিত্যিক বা কবি হওয়ার দায়বদ্ধতা স্বীকার করেন তিনি. সেজন্য তিনি যখন প্রথম বইয়ে ‘খোলস’
কবিতায় লেখেন ‘খোলসটাকে খুলে ফেললাম আজ সকালে...সেই সঙ্গে যত্তসব আজেবাজে
আমি...’ তখন এক বিদ্রোহীর জন্ম প্রস্তুতি চলছে বোঝা যায়; ঠিক সেরকম যখন লেখেন ‘সন্ত্রাসী
ছেলেটির ভোর ভোর গলায় বেজে ওঠে, অস্ত্রের গান, রক্তের পেলব শৃঙ্গার/ তাই দিয়ে সে
জাগিয়ে রাখে সুধু বিশুদ্ধ নিষ্ঠুরতা..’ (প্রেমে সন্ত্রাসে), তখন বোঝা যায়
প্রতিবাদী ও পরিবর্তনকামী কবির কলম যেকোন মুহুর্তে নির্দ্দিধায় এফোঁড় ওফোঁড় করে
দিতে পারে সকল অবক্ষয়ী ধারনাকে.
চিরশ্রী ভাঙ্গতে থাকা সমাজটিতে এক ব্যতিক্রমী কারুশিল্পী.
ওর নিজস্ব শৈলী অনুসরনীয়, অনুকরনীয়. সেই সঙ্গে বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে যাবার যে সহজ
গতি তাঁর আছে সেটি আমদের পাঠসুখ দেয়, আশা যোগায়, প্রেমে ফেলে, বিষাদমৌন করে, ফিরে দেখতে
ইচ্ছে করে, ‘ঘন কার্তিকে/ ভরা ফসলের মাঠ/গহন এ নদী/..’(হেমন্ত ধান, ঋতু...),
ওর ডাকে সারা দিতে উন্মনা হই ‘বের হও, বের হও/ এই শরীর সরোবর ছেড়ে...’(চুর্ন
গ্রীষ্ম, ঋতু..). চিরশ্রী নিয়ত আমদের কাব্যজগতটির শ্রী বৃদ্ধি করুন এই কামনা
জানাই!
1. চন্দ্রাহত (কবিতা, দেবলীনা সেনগুপ্ত)
এ বছরের
গোড়ার দিকে ‘আলোকবর্ণা’
এবং শেষের দিকে ‘চন্দ্রাহত’
হাতে এসে পড়ল। দুটিই কবি
দেবলীনা সেনগুপ্তের প্রথম এবং দ্বিতীয় কবিতার বই। দ্বিতীয় বই চন্দ্রাহত পড়তে পড়তে ভাবছিলাম
জীবন দর্শন নিয়ে কবি যেভাবে নিজেকে উজাড় করেছেন বইটির প্রতি পৃষ্ঠায়, তাতে এই বই সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করা যায় না, শুধু বিস্মিত হতে হয় । ভাবতে হয়, এ কোন ছায়াময় চরাচরে, কোন নিসর্গে দেবলিনা আমাদের সফরে নিয়ে যাচ্ছেন আর পথে ছোট বড় নূরী
পাথরে হোঁচট খাবার সময় মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে এই মায়া-শব্দের কুয়াশা চাদরের ঠিক
পেছনেই রয়েছে আমাদের চির পরিচিত কান্না হাসির সাধারণ জগতটি। ছোট ছোট পংক্তিতে দু
তিনটি শব্দ ব্যবহারের কবির যে সিগ্নেচার স্টাইল, সেই মুনশিয়ানা যথাযথ রেখে তিনি ছুঁয়ে
গেছেন বাস্তব এবং কল্পনার অসংখ্য অনুভুতি । বই এর শুরুতেই মানুষ হবার আহ্বান ছিল, মাঝখানে মানবিকতার গুণে সমৃদ্ধ হবার রসদ এবং শেষে প্রেম ও ক্ষমাহীন
সত্তার যুপকাষ্ঠে বিলীন হবার তির্যক সংকেত এই কাব্যপুস্তিকাটিকে সাধারণ মানুষের
জীবন দর্পণ করে তুলেছে ।
স্বনামধন্য কবি সঞ্জয় চক্রবর্তীর ভূমিকা, ভিকি পাবব্লিসার্স কর্মীদের নিষ্ঠা ও সুন্দর বাধাই চোখ ও মনের আনন্দ
দিল । কবির সৃষ্টিশীল দীর্ঘজীবন কামনা করি।
****************
2. অশ্রুকথা, মিশ্রআলাপে(কবিতা, তপন মহন্ত)
স্বদেশে স্বজাতির বিপন্নতা যখন কবিকে ভাবায় ও
কাঁদায় তখন যে সংকলন তৈরি হয় তার নাম ‘অশ্রুকথা মিশ্র আলাপে’ । তপন মহন্তের সাম্প্রতিকতম কবিতার
বইটির এই শিরোনাম । কবিতার আলংকারিক কল্পরাজ্যকে পেছনে রেখে কঠিন বাস্তবের রূঢ়তাই বার বার উপজিব্য হয়ে উঠেছে
তপনের কবিতার। ধর্ম, রাজনীতি, প্রেম এই সব চেনা বিষয় খুব সাধারণ ভাবে
কিজানি কি অসাধারণ ব্যঞ্জনা নিয়ে ফিরে ফিরে আসে এই বইটির পাতায় পাতায়, ভাবতে অবাক লাগে! কবি যে শুধু স্বপনচারিণী নন, বরং সচেতন শব্দজীবী, স্বজাতির পাশে নিজের কলমকে দাঁড় করিয়ে তিনি তাই
প্রমাণ করলেন এই কবিতার বইতে। চমত্কার ছাপা এবং বাধাই এর জন্য ভিকি পাবলিশার্সকে
সাধুবাদ । অভিনন্দন হে কবি!
****************
3. কুয়াশায় ভেজা টাইমলাইন (কবিতা, কমলিকা মজুমদার)
বাংলা
কবিতার সুদীর্ঘ ইতিহাস,
মহাকাব্য বা পুরাণের গল্পগাথার সঙ্গে জড়িয়ে পাড়ি দিয়ে এসেছে বেশ কয়েকটি যুগ। সেইসঙ্গে
তাকে যুগ প্রয়োজন ও সামাজিক দায়বদ্ধতা মেনে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর নতুন আঙ্গিক,
সজ্জা,
বিন্যাস ইত্যাদি দিয়ে সাজিয়ে চলেছেন একনিষ্ঠ কাব্য-সাধকেরা। উত্তর পূর্বের
যে কবিরা বাংলা কবিতাকে আগামী পাঠকের জন্য কঠোর পরিশ্রমে লালিত করে চলেছেন কমলিকা মজুমদার তাঁদের মধ্যে অন্যতম!
২০১৬র ডিসেম্বরএ প্রকাশিত কমলিকার প্রথম কবিতার বই তিনি নিজে ডাকযোগে পাঠালেন, সেই সঙ্গে পেলাম একটি ছোটখাট কবিতা-খনি!ইতিপূর্বে বিভিন্ন পত্র
পত্রিকায় ওর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে, কিন্তু একটি সংকলনের অভাব আমরা অনুভব
করছিলাম। আধুনিক সময়ের এক জাগ্রত ও
সুচিমুখ উপস্থাপন কবির বই ‘কুয়াশায় ভেজা টাইমলাইন’ । অত্যন্ত যত্নে, নৈপুন্যে ও সংযমে এক একটি কবিতা দিয়ে তিনি এই সময়ের বিভিন্ন স্তরে
আঘাত হেনে গেছেন। ইংরেজি শব্দের সাহসী ব্যবহার তাঁর প্রথা ভাঙার বোহেমিয়ানার
প্রকাশ। নিকৃষ্ঠ সমাজনীতি, বিকৃত ধর্মব্যাখ্যা, শোষণ ও নারী এই সব বিষয়ের ওপর তীব্র কশাঘাত করা তাঁর কবিতা কিন্তু
সৌন্দর্য স্নিগ্ধতা বা শাশ্বত কাব্য থাকার অঙ্গীকার থেকে বিচ্যুত হয়নি। ঘুনে ধরা
সমাজ ব্যবস্থায কমলিকার মতো প্রতিবাদী কলম অনলস ভাবে এক প্রকৃত কবির দায়ভর বয়ে
চলেছে, ‘কুয়াশায় ভেজা টাইমলাইন’ পড়া শেষে স্তব্ধ হয়ে পাঠককে আমরা এই ভাবেই
ভাবাবে!
বরাবরের মতো ভিকি পাবলিশার্স এর মুদ্রণের প্রশংসা
না করে পারা যায় না। বইটির শুরুতে লেখকের নিজস্ব কথা, প্রাককথন বা ভূমিকা থাকলে অসংগত হত না। কমলিকা আরো লিখুন, আপনার কবিতা-অস্ত্র ক্রমশ ধারালো হোক!
4. অবনী চক্রবর্তীরপঞ্চাটি কবিতা
4. অবনী চক্রবর্তীরপঞ্চাটি কবিতা
যারা
মগ্নতার সঙ্গে কবিতা পড়েন, এবং অসমীয়া কবিতা জগতের বিশদ খবর রাখেন তাঁদের
কাছে অবনী চক্রবর্তী নিশ্চয় একটি পরিচিত নাম। তবে বাংলার মতো ব্রহ্মপুত্র
উপত্যকায় অসমীয়া কবিতার পাঠকও দুর্ভাগ্যজনক ভাবে কমে যাচ্ছে, সুতরাং অসমের
অকালে হারিয়ে যাওয়া এই উজ্জল জ্যোতিষ্কটির সঙ্গে দেখা গেল অনেকের পরিচয়
নেই।
অবনীর সুযোগ্য সন্তান, আমার বন্ধুবর ঋতিক চক্রবর্তীর হাত থেকে পেলাম “অবনী চক্রবর্তীর পঞ্চাশটি কবিতা” (মূল অসমীয়া কবিতার বাংলা অনুবাদ)। এগুলো অনুবাদ করেছেন বাসুদেব দাস।
কবিতাগুলো পড়তে পড়তে এক অত্যাশ্চর্য ভাবনার সামনে দাঁড় করিয়ে দিলেন কবি । আমাদের অতি পরিচিত সমাজের এক অপরিচিত মুখ দেখালেন । তাঁর কবিতা পড়ার সময় শ্রেণী সংগ্রাম ও বাম রাজনীতির প্রভাব যে কবিকে একসময় রনিত করেছিল তা বোঝা যায়, কিন্তু চেনা বিষয়ের গন্ডি থেকে আমাদের তিনি রাজনীতি দর্শন বিজ্ঞান ইত্যাদির ওপরে যে খেয়ালী কবিতা-বিশ্বটি আছে, সেখানে নিয়ে যান। বর্ণ, জাতি ধর্ম ইত্যাদির অচল ব্যাখ্যার প্রতিবাদে তিনি লেখেন “কার সাহায্যে ওরা যুদ্ধ করে”, সামাজিক অবিচারের বিরুদ্ধে লেখেন “ কনসেনট্রেসন ক্যাম্প” এর মত দীর্ঘ কবিতা, লেখেন অবিস্মরণীয় লাইন
“কৃষক... তাঁর আশাতেই সূর্য
দিনটিকে তুলে দেয়
নিত্য চিতায় ...
অবনীর কবিতা পড়তে পড়তে মনে হয় একজন সামাজিক দায়বদ্ধ কবি তাঁর বলিষ্ঠ হাতে আমাদের সমাজকে ধরে নিয়ে যান পরবর্তি শতাব্দীতে মানুষের মতো বাঁচতে। বইটি প্রকাশ করেছে কবিতা প্রকাশন, খরঘুলি, গুয়াহাটি। আমাদের দুর্ভাগ্য 1941 এ নলবাড়িতে জন্মানো এই কবি 12 নভেম্বর 1994 এর সন্ধ্যা পাঁচটায় গুয়াহাটির খরঘুলি বাসভবন থেকে সান্ধ্য ভ্রমণে বেরিয়ে আজ অব্দি আর ফিরে আসেননি !
অবনীর সুযোগ্য সন্তান, আমার বন্ধুবর ঋতিক চক্রবর্তীর হাত থেকে পেলাম “অবনী চক্রবর্তীর পঞ্চাশটি কবিতা” (মূল অসমীয়া কবিতার বাংলা অনুবাদ)। এগুলো অনুবাদ করেছেন বাসুদেব দাস।
কবিতাগুলো পড়তে পড়তে এক অত্যাশ্চর্য ভাবনার সামনে দাঁড় করিয়ে দিলেন কবি । আমাদের অতি পরিচিত সমাজের এক অপরিচিত মুখ দেখালেন । তাঁর কবিতা পড়ার সময় শ্রেণী সংগ্রাম ও বাম রাজনীতির প্রভাব যে কবিকে একসময় রনিত করেছিল তা বোঝা যায়, কিন্তু চেনা বিষয়ের গন্ডি থেকে আমাদের তিনি রাজনীতি দর্শন বিজ্ঞান ইত্যাদির ওপরে যে খেয়ালী কবিতা-বিশ্বটি আছে, সেখানে নিয়ে যান। বর্ণ, জাতি ধর্ম ইত্যাদির অচল ব্যাখ্যার প্রতিবাদে তিনি লেখেন “কার সাহায্যে ওরা যুদ্ধ করে”, সামাজিক অবিচারের বিরুদ্ধে লেখেন “ কনসেনট্রেসন ক্যাম্প” এর মত দীর্ঘ কবিতা, লেখেন অবিস্মরণীয় লাইন
“কৃষক... তাঁর আশাতেই সূর্য
দিনটিকে তুলে দেয়
নিত্য চিতায় ...
অবনীর কবিতা পড়তে পড়তে মনে হয় একজন সামাজিক দায়বদ্ধ কবি তাঁর বলিষ্ঠ হাতে আমাদের সমাজকে ধরে নিয়ে যান পরবর্তি শতাব্দীতে মানুষের মতো বাঁচতে। বইটি প্রকাশ করেছে কবিতা প্রকাশন, খরঘুলি, গুয়াহাটি। আমাদের দুর্ভাগ্য 1941 এ নলবাড়িতে জন্মানো এই কবি 12 নভেম্বর 1994 এর সন্ধ্যা পাঁচটায় গুয়াহাটির খরঘুলি বাসভবন থেকে সান্ধ্য ভ্রমণে বেরিয়ে আজ অব্দি আর ফিরে আসেননি !
No comments:
Post a Comment