Saturday, September 26, 2015

বোধন

আবার এসেছে আশ্বিন
আনুষঙ্গিক সবাই সংগে আছে
ভেজা ঘাস, শিউলি, ভোরের কুয়াশা
রোদ্দুরে শুকনো খড় আর
কুমারের নরম সাদা মাটি

ইতিমধ্যে পুরনো হয়ে গেছে
টাওয়ারের কণ্ঠায় ইস্পাত পাখির দাপদাপির কাহিনি,
থামছে সমুদ্র উপকূলে গাজা উপাক্ষ্যান
হঠাত্পথ ছেড়ে রেল, শূন্যে বাতাসে বা জলে
কু ঝিক ঝিক করতে করতে চলে গেল অনন্তের পথে
ভাগ্যিস সেদিন অপু দুর্গা দাড়িয়ে ছিল না
কাশবনের পাশে !
দেশীয় শান্তি বজায়ে বিরোধী নেতারাও বনধ ডেকেছিলেন

টেলিমোবাইল যোগে বেহেস্ত আর বৈকুন্ঠ সরগরম
শ্রীহরি আর খোদাতালার অনুগামীরা
ওর বাধা এলাকায় ঢুকে
খেয়োখেয়ি আর বাদর নাচ করে জখম হচ্ছে অবিরত

অসময়ে বাতাসে নররক্ত দিয়ে হোলি উত্সব জমেছে-
অন্দর মহলের অজস্র কেচ্ছা
শাক দিয়ে সযত্নে মুড়ে
মন্ত্রীরা শান্তি সংঘের বিদেশী বৈঠকে বসছেন

পিতৃপক্ষের শেষে দেবীপক্ষের শুরু
ঢাকের বাদ্যি শুরু হয়েছে ততক্ষণে,
তৈরি মন্ডপে সাজসজ্জা, আলো, কল্কা, কলস-
সযত্নে লুকানো গেছে, উত্সাহী যুবাদের
শেষরাতের কারনবারি

স্বামী আর নিরীহ সন্তানদের সাথে
মা আসছেন
আনুষঙ্গিক সবাইকে সঙ্গে নিয়ে
ভেজা ঘাস শিউলি ভোরের কুয়াশা মাটি
খড়, রক্ত, গুলি, আর ধোয়ার সাথে

এবারে আশ্বিনে !  

Tuesday, August 4, 2015

জাতিস্মর

আমার কথা মনে পড়লেই
বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস
      বুকমাথা আর পেট থেকে
                          বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস
সোনারঙের দিনগুলো-শুয়োপোকার মতো
বেরিয়ে আসে চেতনার আকাশে!


আমি মাঠে খেলতামনদীতে নাইতাম
কাশেমচাচার বাড়ি যেতাম
আমার বাড়ি নবীগঞ্জে
আমার বাড়ি আখাউড়ায়
আমার বাড়ি ছুটতে ছুটতে...ব্রাহ্মণবেড়িয়ায়!


রেজানুরআমিনারুকুদের সাথে
ছুটতে ছুটতে হঠাৎ টুকরো টুকরো
তুলোর মতো ছড়িয়ে যেতাম পাবনায়খুলনায়!


ঐখানে একটা ডোবা ছিলঐখানে রেলপথ
ঐখানে বিশালাক্ষ্মীর মন্দিরএইতো
ঈদএইতো নবান্ন...এখানে কাশেম
ওখানে নবারুণ। ঐখানে বাঁকা চাঁদ
ডুবে যাওয়াজংলাঝোপ---শালডুংরি
ওখানেই খুব আবেগে আমিনাকে জড়িয়ে ধরা!
সেসব কথা মনে পড়লেই বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস।


ফিঙে পাখিদের গা ডোবানো বুড়িগঙ্গায়
চিত সাঁতারে হারিয়ে যেতাম
আর বাঁশিতে হলুদ আকাশে ছড়িয়ে দিতাম বিষাদসুর
আমার বাড়ি তখন ঢাকায়! আমার বাড়ি বিক্রমপুর!


হঠাৎ দেখি মানুষগুলো কেমন যেন টুকরো মেঘে
হারিয়ে যাচ্ছে মাটির মানুষকান্না চাপায় ক্ষিদের বেগে।


ছড়িয়ে পড়ে মাটির মানুষটুকরো হয়ে রক্ত আকাশ
সেসব কথা মনে পড়লেই---
আর কিছু নয়দীর্ঘশ্বাস!

এদেশের দামিনীদের

বৃথাই করে চেচামেচি সব আহাম্মকের দল
মেয়েটি বড়ই বোকা
ভ্রূনে মরে গেলেই পারতো ।
তোর মতো কত সদ্যজাতা পৌরসভার নালায়
ফেলে রাখা আছে আস্তাকুড়ে
জায়গা কোথায় এত?যে কটা তবু ঘর পেয়েছে – গঞ্জনাময় পাওয়া-
মা পেয়েছে খুব বকুনি
থাম্মা পিসির মতো !
এরপরেতে স্কুল কলেজ আর অনেকখানি হ্যাপা
পড়তুতো দাদা দুরতুতো মামা
হঠাত্‍ লুকিয়ে আদর কোরতো !
দেখতে তোকে আস্ত যত বোকা বোকা রাজপুত্তূর
জমিজমা নোট গয়নাগাটি
এসব ভিক্ষে করত !
গলির মোড়ে অন্ধকারে মুরগি পাঠার মতো
তোর মাংস অনেক মানুষ
ঠুকরে খেতে চাইতো !
লজ্জিত যত শেয়াল শকুন রাজপথে প্রান্তরে
বিলুপ্তিরই পথ ধরেছে
একদম তোর মতো ।
মেয়েটির কবরশ্মশানভূমিপুরো দেশটা জুড়ে
সংগ্রামী মেয়েবড্ড বোকা-
ভ্রূনে মরে গেলেই পারতো!

পিতা

তোমার বুকে হাটতে হাটতে 
হোঁচট খেয়ে আলতো পরা
পিতা তোমার মনে আছে 
আমার কিন্তু মনে পড়ে না 

তোমার শরীর, রক্ত চুষি
চিবিয়ে ছিঁড়ে নিংড়ে হাসি
সুখের মোড়কে সুখ যন্ত্রনা
আমার কিছুই মনে পড়ে না !

রক্তনদী

(প্রকাশিত : দৈনিক যুগশঙ্খ  কাগজে  , গুয়াহাটি )

তীব্রবেগে ইস্পাত কণা
গতি ছন্দে মৃত্যু ছুটে চলে
হাড় রক্ত ভয় হলুদ আকাশ জোড়া
দুসসময়ের নৌকা ভাসে ব্রহ্মপুত্রের বালি ও জলে

টুকরো টুকরো তারাদের শব
রাজপথ রক্তে মাখা মাখি
আকাশ ভেঙে সূর্য ঝরে নীল মৃত্যুর মতো
বরাকের শুকনো বুকে ভাঙ্গা কাঠের পাখি

নবীন কবির কবিতা যত – বিষয় দুশসময়
নদীর জলে অনড় ঢেউ , জল শুধু নয়, ঘাম
আগুনে পুড়ে ছাই কবিতা, টুকরো জলে মেশে

ব্রহ্মপুত্রে, বরাকে ভাসে কবিতা ভরা খাম ।