Sunday, March 5, 2023

একটি কবিতার জন্ম ও মৃত্যু

 ত্রিপুরা আগরতলা থেকে প্রকাশিত দৈনিক বজ্রকণ্ঠ পত্রিকার ১৭০৭ তম সংখ্যায় আমার একটি কবিতা, পড়ুন এখানে। রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ এটি সম্পাদনা করে চলেছেন খুব নিষ্ঠার সঙ্গে ।




।। নীলদীপ চক্রবর্তী ।।
সুপ্রাচীন পাহাড় ভেদ করে পাথরের
জমে থাকা স্তুপ, দাঁড়িয়েছে পাঠোদ্যত
এক প্রবীণ কবির মতো! আর তার
পাশেই পাতাল খুঁড়ে ঢুকে যাচ্ছে
সুগভীর খাদ, বিশাল পাথর
সঙ্গে সুপ্ত প্রাগৈতিহাসিক দেবতার চকমকি
যেন ঠুকে ঠুকে আগুন ফুলকি তোলেন
শীতের কুয়াশা ঘেরা রাতে! বিষন্ন
নায়েগ্রার জলে নামে কবিতার সফেন
পংক্তি! সিক্ত করে মৌনী গোবির
তপ্ত বালুরাশি।
আহা কি মুক্তোর লালি
ইউরোপিয়ান উইলোর নন্দন জঙ্গলে।
পাথরের গোপন আগুন কবি ও দেবতার
হাতে, ঝাঝালো অথবা স্নিগ্ধ তাপে
অনায়াস পোড়ায় প্রাচীন গভীর জঙ্গল
গোবির বঙ্কিম পিঠে চলে শ্লথ সরীসৃপ
জিপসী ক্যারাভান! যাযাবর গান পানে
কবিতা মাতাল হয়। তখন উটের পিঠে
রাত্রি গভীর হয়। ভাঙ্গা নক্ষত্রের ছায়া
ছড়ায়, অমিত্রাক্ষর কবিতার কমনীয় দেহে।
দেহ থেকে ঝরে পড়ে ক্যাকটস
মনসার সূঁচল কন্টক, অবাধ্য পাথরের
স্তুপ। আরাকানের গুড়ো মেশে গোবির
বালিতে!
দূর থেকে স্বর ভাসে, আসে আলেয়া ইশারা
নায়েগ্রার গান গায় মৃত্যু কোলাহল
তৃতীয় প্রহরে, নিশিযাম বয়ে আনে
কবিতার দেহ। নক্ষত্রেরা শব নিয়ে
যায়। দূরে, উত্তরে, আরো উত্তরে!
তুষারের শৃঙ্গে শৃঙ্গে নৈ:শব্দ্য প্রবল
কবি এক অশীতিপর শৃঙ্গে দাঁড়ানো
তার কণ্ঠ ইস্পাত কঠিন, হিমবাহধারায় –
শীতল মৃত্যুর মতো নিরেট কবিতা
এইভাবে পরবাসে কবিতা লালিত হয়
সমৃদ্ধ যাপনে! কখনো ভাবনা
রজ:স্বলা হয় আর নিঃশব্দ ধারায়
শব্দ ঝরে পড়ে, কান্দাহার মালভূমির
বিজনে!
সেখানেও কবি যান
সঙ্গে নিয়ে কিছু নির্বাক কিশোর
তাঁদের কণ্ঠ ও দৃষ্টিদান হয় দিগন্তে
ফোঁটা কাঁটাফুল আর বিচ্ছিন্ন মর্মরের
গালিচায় বসে, আলতামিরার গুহাবাসী!
তারাও কবিতার লাইন, তারাও বাত্সায়নের বই;
ওদের সন্ধ্যা ঝরে পড়ে – কবিতার নিভৃত আকাশ
থেকে ! ভেসে ভেসে গোলার্ধ ঘোরেন কবি
সন্মুখে উচ্ছাসিত ফেনিল জলরাশি
চকিতে লাফ দিয়ে কবিতা নামে –
জলের বিছানায় – অমরত্বর স্বর্গীয় নেশায়
সমুদ্রের শেষ নক্ষত্রের সাথে, মহাকাশে!
*******

No comments:

Post a Comment